ঢাকা: ৫ আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর, একে একে বেরিয়ে আসতে থাকে এস আলম গ্রুপের ব্যাংক লুটপাটের চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। অভিযোগ রয়েছে, দেশের ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে সপরিবারে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলম মাসুদ। তবে এখনো দেশে অবস্থান করছেন তাদের কিছু ঘনিষ্ঠ সহযোগী, যারা এই অর্থ পাচার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন এস আলমের মেয়ের জামাই বেলাল আহমদের প্রধান সহযোগী, মাহতাব এইচ চৌধুরী। যিনি বর্তমানে বেলালের মালিকানাধীন ইউনিটেক্স গ্রুপে কর্মরত আছেন।
কে এই মাহতাব?
মাহতাব হোসেন চৌধুরী ঢাকার বারিধারার ডিওএইচএস-এর বাসিন্দা তিনি তার কর্মজীবনে গ্রে ওয়ার্ল্ডওয়াইড বাংলাদেশ লিমিটেডের ক্লায়েন্ট সার্ভিসিং ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন । তবে, গ্রে থেকে চাকরি হারানোর পর তাকে আশ্রয় দেন বেলাল আহমেদ, এবং সেই থেকেই তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
অর্থ পাচার চক্রে মাহতাবের ভূমিকা
জানা গেছে, মাহতাব চৌধুরী ইউনিটেক্স গ্রুপে যোগদানের পর থেকেই বেলাল আহমেদকে অর্থ পাচারের বিভিন্ন কাজে সহায়তা করে আসছেন। ইউনিটেক্স গ্রুপ, যা বেলাল আহমেদের মালিকানাধীন, সেটির নামেই ইসলামী ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নেওয়া হয়েছে, যার বিপরীতে পর্যাপ্ত জামানত ছিল না। অভিযোগ অনুযায়ী, এসব ঋণের একটি বড় অংশ দেশের বাইরে পাচার করা হয়েছে। মাহতাব চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি এই অর্থ পাচারের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন এবং এখনো বেলাল আহমেদের হয়ে অবৈধ লেনদেন চালিয়ে যাচ্ছেন।
পেশাগত জীবনের আড়ালে বিতর্ক
মাহতাবের জীবনবৃত্তান্ত থেকে জানা যায়, তিনি বিভিন্ন সুপরিচিত ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করেছেন এর মধ্যে রয়েছে বিএটিবি, নকিয়া, জিএসকে, ইগলু, ফার্ম ফ্রেশ এবং বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেমন ঢাকা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংক । তার অভিজ্ঞতা মূলত ব্র্যান্ড কমিউনিকেশন, মার্কেটিং এবং ইভেন্ট ব্যবস্থাপনার মতো ক্ষেত্রগুলোতে । কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠেছে, তার এই পেশাদারী দক্ষতা কি কেবল বৈধ কার্যক্রমেই সীমাবদ্ধ ছিল, নাকি তা এস আলম গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক কেলেঙ্কারিতেও ব্যবহৃত হয়েছে?
বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, এস আলম গ্রুপ এখন আর দেশের ভেতরে নেই। কিন্তু তাদের অবৈধ অর্থের একটি বড় অংশ এখনো দেশে রয়ে গেছে, যা বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে দেশের বাইরে পাঠানো হচ্ছে। মাহতাব চৌধুরীর মতো ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা এই কাজটিই দক্ষতার সঙ্গে করছেন বলে অভিযোগ। এই চক্রের মূল হোতারা দেশ থেকে পালিয়ে গেলেও, তাদের এসব সহযোগীদের মাধ্যমে এখনো অবৈধ কার্যক্রম চলছে।