ডেস্ক নিউজ: বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ও ম্যুরাল স্থাপনে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন।
তিনি জানান, “দেশজুড়ে বঙ্গবন্ধুর অপ্রয়োজনীয় ভাস্কর্য ও ম্যুরাল স্থাপনে কয়েক হাজার কোটি টাকার সরকারি অর্থ অপচয় ও তছরুপের অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
এছাড়া, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পেও দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছেন তিনি।
মহাপরিচালক বলেন, “মুজিব কিল্লা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বিল দেওয়া, গভীর নলকূপের অধিকাংশ বিকল হয়ে যাওয়া এবং বিভিন্ন অনিয়মসহ হাজার হাজার কোটি টাকার তছরুপের অভিযোগ উঠেছে। এগুলোরও অনুসন্ধান শুরু হচ্ছে।”
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর আগে দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল, ভাস্কর্য ও প্রতিকৃতি স্থাপন করে আওয়ামী লীগ সরকার। টানা ১৫ বছর ধরেই এসব ভাস্কর্য, ম্যুরাল ও প্রতিকৃতি তৈরি করা হয়। অভিযোগ রয়েছে অপ্রয়োজনীয় ম্যুরাল ও ভাস্কর্য তৈরিতে চার হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়ে থাকতে পারে।
দেশে বঙ্গবন্ধুর মোট এক হাজার ২২০টি ভাস্কর্য ও ম্যুরাল আছে। বিভিন্ন দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য ও ম্যুরালের মধ্যে খুলনা বিভাগে ২১টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১২টি, ঢাকা বিভাগে ৪১টি, বরিশাল বিভাগে তিনটি, ময়মনসিংহ বিভাগে পাঁচটি, রংপুর বিভাগে চারটি, রাজশাহী বিভাগে ৯টি এবং সিলেট বিভাগে একটি স্থাপন করা হয়। এর বাইরেও কয়েক হাজার ভাস্কর্য ও ম্যুরাল নির্মাণ ও স্থাপন করা হয়েছে।
অন্যদিকে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মানুষ ও গবাদি পশু রক্ষায় সারাদেশে স্থাপন করা হয় আশ্রয়কেন্দ্র। প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছিল দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে এসব ভবন সামাজিক অনুষ্ঠান, কমিউনিটি উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করা হবে। পাশাপাশি ভবনের সামনের খোলা জায়গা ব্যবহার করা হবে খেলাধুলায়। সরকার এ প্রকল্পের নাম দিয়েছিল ‘মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্প।
২০১৮ সালের জুলাইয়ে দেশের ১৬ জেলায় ৫৫০টি মুজিব কিল্লা নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এর জন্য ব্যয় ধরা হয় প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। মানহীন সামগ্রী দিয়ে নির্মিত এসব কিল্লা এরই মধ্যে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অনেক স্থানে ভেঙে গেছে। কিছু কিছু জায়গায় লোকালয় থেকে অনেক দূরে নির্মাণের কারণে পরিত্যক্ত ভবনে পরিণত হয়েছে। অনেকগুলোর ক্ষেত্রে লাইট-ফ্যান কিংবা অন্য প্রয়োজনীয় জিনিস দেওয়া হয়নি। এমনকি কোথাও কোথাও এসব কিল্লা নদীভাঙনের মুখেও পড়েছে।