ডেস্ক নিউজ: মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলায় শাহজালাল ফার্টিলাইজার প্রকল্পের সীমানা প্রাচীর নির্মাণে দুর্নীতি, জোরপূর্বক উচ্ছেদ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র উঠে এসেছে। স্থানীয় যাদুরগুল গ্রামের প্রায় ২০টি পরিবার বসতভিটা হারিয়ে চরম দুঃখ-কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। সম্প্রতি দেশের শীর্ষ দৈনিক মানবজমিন এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
ভুক্তভোগীদের দুর্দশা ও অভিযোগ
২০১৭ সালে ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রকল্প এলাকায় সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য স্থানীয়দের বাড়িঘর ও সম্পত্তি দখল করে। এ সময় ২০টি পরিবার জোরপূর্বক উচ্ছেদ হয়। তারা তাদের বসতভিটা, গাছপালা, পশুপাখি, এমনকি জীবিকার মাধ্যমও হারায়।
ভুক্তভোগী বিল্লাল হোসেন মিন্টু বলেন, “আমার বাড়িতে ফলজ ও বনজ গাছ ছিল, হাঁস-মুরগি পালন করতাম। কিন্তু কারখানার জোরপূর্বক উচ্ছেদের ফলে আমার পুরো পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে। এখন ফেঞ্চুগঞ্জে ভাড়া বাসায় মানবেতর জীবনযাপন করছি।”
অনুরূপ অভিযোগ করেছেন কাওসার, রহিমা, আব্দুস শুকুরসহ অন্যান্য গ্রামবাসী। তাদের দাবি, সার কারখানা কর্তৃপক্ষ ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাদের জমি দখল করেছে।
দুর্নীতির চিত্র: প্রকল্প পরিচালকের একচ্ছত্র ক্ষমতা
সার কারখানার সীমানা প্রাচীর নির্মাণ এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার কামরুজ্জামানের ভূমিকা নিয়ে উঠেছে গুরুতর অভিযোগ। তিনি প্রকল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একই পদে থেকে একচ্ছত্র ক্ষমতা প্রয়োগ করেছেন।
২০১৩ সালে এক সাংবাদিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৫,৫০০ কোটি টাকার এ প্রকল্পে শুরু থেকেই ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। প্রকল্পে অতিরিক্ত বিল, অনিয়ম এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তখনই প্রকাশ পায়।
সাংবাদিক হয়রানি ও মৎস্য খামার দখল
প্রকল্পের দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরায় স্থানীয় সাংবাদিক হাসান চৌধুরীকে ব্যাপক হয়রানির শিকার হতে হয়। তার প্রতিষ্ঠিত লাভজনক মৎস্য খামারটি সার কারখানার সীমানার ভেতরে নিয়ে বেদখল করা হয়।
সাংবাদিক হাসান চৌধুরী বলেন, “প্রকল্প পরিচালক আমার বিরুদ্ধে আক্রোশ মেটাতে মৎস্য খামার দখল করেছেন। প্রকৃত সীমানা জরিপ হলে দুর্নীতির চিত্র সামনে আসবে।”
ক্ষমতার অপব্যবহার ও রাজনৈতিক প্রভাব
প্রকল্প পরিচালক কামরুজ্জামান আওয়ামী লীগ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার ইচ্ছার বাইরে প্রকল্পে কোনো কাজ হয়নি। ২০১৩ সালে দুর্নীতির প্রতিবেদন প্রকাশের পর তিনি সাংবাদিকদের হুমকি দেন এবং তাদের হয়রানির নানা পদ্ধতি অবলম্বন করেন।
শাহজালাল ফার্টিলাইজার প্রকল্পের দুর্নীতি এবং জোরপূর্বক উচ্ছেদের ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা আজও ক্ষতিগ্রস্ত। ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচার ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন। সার কারখানার প্রকৃত সীমানা জরিপ এবং প্রকল্পের দুর্নীতি তদন্ত করলে এ চাঞ্চল্যকর ঘটনার প্রকৃত সত্য প্রকাশ পাবে বলে তাদের বিশ্বাস।